রাজস্ব ফাঁকি ৪০ কোটি টাকা
ভারত থেকে রেমন্ড ব্র্যান্ডের কাপড় আমদানিতে ঢাকার তিনটি প্রতিষ্ঠান ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ইসলাম ট্রেডার্স, রিলায়েন্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও টপটেন ফেব্রিকস অ্যান্ড টেইলার্স।
শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট কার্যালয় এ ফাঁকি উদ্ঘাটন করে ২ সেপ্টেম্বর ৩৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান তিনটির কাছ থেকে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
যোগাযোগ করলে কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবীর গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন প্রতিষ্ঠানে শুধু রেমন্ড ব্র্যান্ডের কাপড়েই আমরা প্রায় ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির তথ্য পেয়েছি। এ ধরনের ঘটনা আরও আছে বলে মনে হয়।’
ফাঁকি উদ্ঘাটনে গত জুলাইয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে ঢাকা শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট কার্যালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসলাম ট্রেডার্স ও রিলায়েন্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং ইসলাম ট্রেডার্সের একার ফাঁকিই ১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর রিলায়েন্স ট্রেডের ফাঁকি ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অন্যদিকে টপটেন ফেব্রিকস ফাঁকি দিয়েছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন তৈরিতে নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছ থেকে তথ্যও নিয়েছে তদন্ত দল। হাইকমিশনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর নাহিদ রশীদ নয়াদিল্লিতে থাকা রেমন্ডের শোরুমগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে গত ২৩ জুন এক চিঠিতে রেমন্ডের কাপড়ের মূল্যের তথ্য জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলাম ট্রেডার্স ও রিলায়েন্স রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে তিনটি উপায়ে। এগুলো হচ্ছে আন্ডারইনভয়েসিং বা মূল্য কম দেখিয়ে শুল্ক কম দেওয়া, আমদানি-পরবর্তী সংযোজনের ওপর মূসক না দেওয়া এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বন্ডেড সুবিধায় পণ্য আমদানি। প্রতিষ্ঠান দুটি পণ্য আমদানি করেছে কেজিতে।
সর্বনিম্ন মূল্য বিবেচনায় নিলেও রিলায়েন্স ট্রেডের প্যান্ট-স্যুটের ঘোষিত মূল্য হবে প্রতি কেজি ৯ দশমিক ৮০ ডলার। অথচ প্রতিষ্ঠানটি দেখিয়েছে ২ দশমিক ৬৫ ডলার। যদিও শুল্কায়ন হয়েছে ৩ দশমিক ০৬ ডলারে।
আর টপটেন ফেব্রিকস বন্ডেড সুবিধায় আমদানি না করলেও রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে অন্য দুই পদ্ধতিতে। এ প্রতিষ্ঠান কাপড় এনেছে মিটারে এবং প্যান্ট-স্যুটের কাপড়ের দাম দেখিয়েছে মিটারপ্রতি শূন্য দশমিক ৭২ ডলার। তবে শুল্কায়ন হয়েছে শূন্য দশমিক ৯৬ ডলারে। অথচ কম করে ধরলেও মূল্য হবে ৫ দশমিক ৭৯ ডলার। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, মিটারপ্রতি এই দর কয়েক গুণ বেশি।
আন্ডারইনভয়েসিংয়েই বেশি ফাঁকি: প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, আন্ডারইনভয়েসিং বা মূল্য কম দেখিয়েই বেশি ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ট্রেডার্স এবং রিলায়েন্স ট্রেড ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস দিয়ে ভারত থেকে রেমন্ড ব্র্যান্ডের প্যান্ট, শার্ট ও স্যুটের কাপড় আমদানি করে।
তদন্ত দল ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, দুই বছরে প্রতিষ্ঠান দুটি ফাঁকি দিয়েছে ৩০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্ডারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ইসলাম ট্রেডার্সের ফাঁকি ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ও রিলায়েন্স ট্রেডের ফাঁকি ১০ কোটি ১৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
ইসলাম ট্রেডার্সের বন্ডেড লাইসেন্স না থাকলেও গত ২২ মার্চ বন্ড সুবিধার আওতায় রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ৯ লাখ ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া আমদানি-পরবর্তী সংযোজনের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দিয়েছে ৪ কোটি ১৫ হাজার টাকা। রিলায়েন্স ট্রেডও বন্ডেড সুবিধায় ৩৭ হাজার এবং আমদানি-পরবর্তী সংযোজনের ওপর মূসক ফাঁকি দিয়েছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
টপটেন আন্ডারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর আমদানি-পরবর্তী মূল্য সংযোজনের ওপর মূসক ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে ইসলাম ট্রেডার্স ও রিলায়েন্স ট্রেডের স্বত্বাধিকারী আমিরুল ইসলাম গতকাল মোবাইলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কোনো প্রতিষ্ঠান রাজস্ব ফাঁকি দেয়নি, সরকার অবরোহী পদ্ধতিতে হিসাব করেছে, যা আদালতেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন।
একই দাবি করেন টপটেন ফেব্রিকসের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ হোসেনও। তিনি বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানও রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে না। এর সপক্ষে তিনিও কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি।