মূল্যছাড়ে বাড়তি আগ্রহ হোম টেক্সটাইলে
শেষ সময়ে এসে জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। শুরুর দিকে কেবল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও এখন প্রতিদিনই দুপুর থেকে মেলায় মানুষের ঢল নামছে। মেলায় আগতদের মধ্যে একটি বড় অংশই ঢুঁ দিচ্ছেন হোম টেক্সটাইল সামগ্রীর বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলে।
মেলায় অংশ নেওয়া হোম টেক্সটাইল সামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নকশার বিছানার চাদর, লেপ ও কম্বলের বিকল্প হিসেবে কমফোর্টার, জানালা-দরজার পর্দা, কুশন কভার, বালিশ ইত্যাদি নিয়ে এসেছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে তারা। ফলে এসব পণ্যের প্যাভিলিয়ন ও স্টলে সারাক্ষণ কম-বেশিই ভিড় লেগে থাকছে। গতকাল বুধবার মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এবারের মেলায় সাড়ে তিন শ নকশার বিছানার চাদর নিয়ে এসেছে ক্লাসিক্যাল হোম টেক্স। তাদের চাদরের মূল্য ৬৫০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বিভিন্ন নকশার জানালা-দরজার পর্দা ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তাদের প্রতিটি কমফোর্টারের দাম ১ হাজার ৯০০ থেকে ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাচ্চাদের পুতুল, টাওয়েল ও গৃহসজ্জার পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছে হোম টেক্স। মেলা উপলক্ষে সব পণ্যে ক্রেতাদের ১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আল আমিন বলেন, ‘বিছানার চাদর দিয়ে ৩৪ বছর আগে হোম টেক্সের যাত্রা শুরু হয়। আমরা সব ধরনের ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে পণ্য তৈরি করি। তাই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিতে বেগ পেতে হয় না।’ তিনি জানান, মেলায় তাদের নিজস্ব প্যাভিলিয়ন ছাড়াও দুটি ডিলার হোম টেক্সের পণ্য বিক্রি করছে।
কেমন সাড়া মিলল—এই প্রশ্নের উত্তরে আল আমিন বললেন, ‘বাণিজ্য মেলায় আমরা মূলত পণ্যের প্রচারের জন্য আসি। সারা দেশে হোম টেক্সের ৩৫০ ডিলার আছে। কিন্তু তারা একসঙ্গে সব ধরনের পণ্য নেয় না। ফলে ক্রেতারা সব পণ্য দেখতেও পান না। বাণিজ্য মেলায় একসঙ্গে সব পণ্য ক্রেতাদের সামনে প্রদর্শনের বিরাট সুযোগ মেলে। সেই হিসেবে ক্রেতা-দর্শনার্থীর কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি।’ তিনি জানান, ঢাকার গুলশান, বসুন্ধরা সিটি, ওয়ারী, উত্তরা ও যমুনা ফিউচার পার্কে হোম টেক্সের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র আছে।
হোম টেক্সের মতো বিভিন্ন ধরনের বিছানার চাদর নিয়ে এসেছে পাকিজা হোম কালেকশন। প্রতিষ্ঠানটির চাদরের দাম ৬৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। ১০টি নকশার কমফোর্টারের দাম ১ হাজার ৮০০ টাকা। পর্দা মিলবে ৫৫০ টাকায়। এ ছাড়া কুশন ও বালিশের কভার পাওয়া যাবে ২৫০ টাকায়। প্রতিটি পণ্যেই ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
পাকিজার প্যাভিলিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা মো. নাছির ও মো. ইব্রাহিম জানালেন, বাণিজ্য মেলায় ভালো বিক্রি-বাট্টা হয়েছে তাঁদের। তবে প্যাভিলিয়নের অবস্থান মেলা প্রাঙ্গণের একটু ভেতরের দিকে হওয়ায় অনেক ক্রেতার নজরে পড়ছে না।
প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হচ্ছে বেঙ্গল। তারাও হোম টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। অংশ নিয়েছে বাণিজ্য মেলায়। প্রতিষ্ঠানটির বিছানার চাদর ৪৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। তবে মেলায় ২৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে তারা। কমফোর্টারের দাম ২ হাজার ৭৫০ টাকা, আছে ৩৫ শতাংশ মূল্যছাড়ের সুবিধা। এ ছাড়া কুশন, টাওয়েল, কোল বালিশ, বালিশও নিয়ে এসেছে বেঙ্গল জানালেন বিক্রয়কর্মী তুনাজ জিনা।
কুষ্টিয়া থেকে নবমবারের মতো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছে কুষ্টিয়া হস্তশিল্প। প্রতিষ্ঠানটির বিছানার চাদরের দাম ৬০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা। তবে মফস্বলের এই প্রতিষ্ঠানটি নজর কাড়ছে মাছ, সূর্যমুখী ফুল, টমেটো, স্ট্রবেরি, কাঁচামরিচ, গোলাপ ফুল আকৃতির কুশন দিয়ে। দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া লুঙ্গি ও গামছা বিক্রি করছে তারা।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনির হোসেন বলেন, ‘দর্শনার্থী অনেক থাকলেও এবার ক্রেতার সংখ্যা একটু কম। এ ছাড়া আগের প্রায় প্রতি মেলাতেই ব্যবসায়ী ক্রেতাদের পাওয়া গেলেও এবার পাইনি।’ তিনি জানান, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে তাঁদের নিজস্ব কারখানায় পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হয়। আর ঢাকার মৌচাকে নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র আছে।
এদিকে প্রতিবারের মতো এবারও মেলার সময়সীমা কয়েক দিন বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে মেলার যৌথ আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা মেলা বাড়ছে না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে দায়দায়িত্ব নিয়ে কেউই স্পষ্ট করে কথাটি বলতে চাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে মেলার সদস্যসচিব রেজাউল করিম গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী রোববার মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র অতিথিদের কাছে পাঠানো শুরু করেছে ইপিবি। ফলে মেলার সময়সীমা এবার আর বাড়ছে না বলেই মনে হচ্ছে।
তথ্যসূত্র : প্রথমআলো