কাঁচাবাজারে যেন আগুন
দুই দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। করলা, টমেটো, শিমসহ প্রায় সব সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম।
হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর নয়াবাজার, নারিন্দা, কাজীপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে তরিতরকারি নিয়ে ট্রাক আসছে না। আর এ কারণেই শাকসবজির দাম বেড়ে গেছে—এমনটাই জানালেন কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী।
তবে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, হরতালে সরবরাহের পাশাপাশি চাহিদাও কম। খুচরা বিক্রেতারা হরতালের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাইকারি বাজারে খুব বেশি দাম বাড়েনি বলে দাবি করেন তিনি।
তাঁর কথার সত্যতা কিছুটা হলেও পাওয়া গেল কারওয়ান বাজারেই। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাজারটিতে গিয়ে দেখা গেল, কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ টাকা। আবার ২০-২৫ হাত দূরের ফুটপাতের ওপর বসা বেশির ভাগ ব্যবসায়ী একই মরিচের দাম হাঁকছেন ১২০ টাকা। অবশ্য নারিন্দা বাজারে ১৬০ ও নয়াবাজারে ১২০ আর মিরপুরের কাজীপাড়া বাজারে ১৫০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়।
সবজির দাম বেশি: নারিন্দা বাজারে গতকাল সকালে করলা ১০০ টাকা কেজি শুনে আঁতকে উঠলেন ভাঙারি ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন। অন্য শাকসবজির কী অবস্থা, জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন, মরিচ ১৬০, টমেটো ১০০, শিম ৭০ আর পেঁয়াজ ১১৫ টাকা কেজি।
সবজির এমন লাগামছাড়া দামের কারণ জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতা তরুণটির ঝটপট উত্তর, ‘সব ডাবল ডাবল হরতালের কারণে তরকারি আসে নাই। তাই দাম বেশি।’
ক্রেতা শরীফ হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সবজির দাম শুইন্যা কী করব, বুঝতাছি না। শুক্রবার ৬০ টাকায় কাঁচা মরিচ কিনছি।’ তিনি আরও জানালেন, পেঁয়াজ ৯৫, করলা ৪৮, টমেটো ৮০ ও ৪০ টাকা কেজি দরে শিম কিনেছিলেন। ক্ষুব্ধ শরীফ বলেন, ‘হ্যারা হরতাল দেয় আর আমরা মাশুল গুনি।’
কারওয়ান বাজারে গত দুই দিনের ব্যবধানে ২০-৬০ টাকা বেড়ে কাঁচা মরিচ ৮০-১২০, ৪০ টাকার করলা ৬০, ২০ টাকার পটোল ৩০-৩৫, ৬০ টাকার গাজর ৮০, ৩০ টাকার বেগুন ৫০-৬০ টাকা, ১২-১৫ টাকার ঝিঙা ৩০, ৮০ টাকার টমেটো হয়েছে ১১০ টাকা। এ ছাড়া ঈদের পর ব্রয়লার মুরগির দাম কম থাকলেও হরতালে আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত শুক্রবার ১১৫-১২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল নারিন্দায় ১৩০ ও নয়াবাজারে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে কারওয়ান বাজারে এখনো ১১৫ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার মুরগি মিলছে।
১০০ টাকা ছাড়াল পেঁয়াজ: হরতালে পেঁয়াজের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তবে একেক বাজারে একের দামে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে দুই দিনের ব্যবধানে ৯৫ টাকার দেশি পেঁয়াজ ১০৫ ও ৮০ টাকার ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয় গতকাল। তবে নারিন্দা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ১১৫ টাকা। অন্যদিকে নয়াবাজারে দেশি ১১০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা।
শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, দেশি পেঁয়াজের মজুত প্রায় শেষ। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে একটি জাতের পেঁয়াজ উঠলেও আমদানি কম হচ্ছে। তাই গ্রামাঞ্চলের বড় কৃষকদের মজুত করা পেঁয়াজই সারা দেশে যাচ্ছে। তবে হরতালে তা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশি পেঁয়াজ আসতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। তবে আগামী মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজ এলে দাম একটু কমতে পারে।
বিপাকে নরসিংদীর চাষিরা: আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, হরতালের কারণে নরসিংদীর সবজিচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা কম আসায় জমি থেকে বেশি পরিমাণে সবজি তুলছেন না তাঁরা। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর নরসিংদীর ছয় উপজেলায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে।
গতকাল সকালে সবজিরহাট বারৈচায় গিয়ে দেখা যায়, অল্প কয়েকজন চাষি ভ্যান, রিকশা ও মাথায় করে বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি নিয়ে বাজারে আসছেন। তবে অন্যান্য দিনের চেয়ে খুব কম। বেলাব উপজেলার ধুকুন্দি গ্রামের সবজিচাষি রুবেল মিয়া নিয়ে এসেছেন লালশাক ও শিম। তিনি বলেন, ‘হরতালের কারণে বেশি সবজি আনি নাই। যদি বেইচতে না পারি।’
বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৩৫-৪০, করলা ৩৫-৪০, পেঁপে ছয়-আট, বরবটি ২০-২৫, শসা ১৫-২০, লালশাক ১৮-২২, শিম ২৫-৩০, লাউ ২৫-৩০, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কয়েকজন চাষি জানালেন, তিন দিন আগেও অর্ধেক দামে এসব সবজি বিক্রি হয়েছিল।
ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে বারৈচা বাজারে আসা পাইকার ইয়াকুব আলী বলেন, ‘হরতালের জন্য আমি গত শনিবার রাতে চলে আসছি। এখন বিভিন্ন হাট থেকে অল্প অল্প করে সবজি কিনে সিএনজি দিয়ে রাতে ঢাকা পাঠাই। মনে করছিলাম হরতালে অল্প হলেও গাড়ি চলব। কিন্তু কোনো গাড়ি ঢাকায় যেতে রাজি হচ্ছে না। বড় বিপদে আছি।’
http://www.prothom-alo.com/economy/article/59617