মংলা বন্দর আমদানিনির্ভর
রপ্তানি নয়, আমদানি পণ্যেই সচল দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলার কার্যক্রম। এই বন্দর দিয়ে বছরে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে, তার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি। ফলে এ বন্দরের কার্যক্রম মূলত আমদানিনির্ভর।
আবার এই আমদানির অর্ধেকই সরকারি পণ্য। অর্থাৎ সরকারিভাবে পণ্য আমদানি না থাকলে বা কম থাকলে মংলা বন্দরে কার্যত তেমন কর্মব্যস্ততা থাকত না।
মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এবং বন্দর সরেজমিনে পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ চালচিত্র পাওয়া গেছে।
এ বন্দর দিয়ে ১০ প্রকারেরও বেশি পণ্য আমদানি হলেও রপ্তানি হয় মাত্র তিন ধরনের পণ্য।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরের মংলা বন্দর দিয়ে প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়। তার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র দুই লাখ মেট্রিক টন পণ্য। সেই হিসাবে বছরটিতে বন্দর কার্যক্রমের প্রায় ৯৩ শতাংশই ছিল আমদানিনির্ভর।
এ ছাড়া চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এই বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। অর্থাৎ চার মাসে বন্দর কার্যক্রমের প্রায় ৯৫ শতাংশ ছিল আমদানিনির্ভর। আবার এই আমদানির মধ্যে চার লাখ মেট্রিক টনই ছিল সরকারি গম ও সার।
বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমনিতেই বাংলাদেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ বেশি। তার মধ্যে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় তার সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। তবে আমদানিনির্ভরতা বেশি হলেও এ ক্ষেত্রে মংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ নেই বেসরকারি আমদানিকারকদের। অবকাঠামোগত ঘাটতিই এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।
জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মংলা বন্দরকে সচল করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য ও সারের আমদানির ৪০ শতাংশ মংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাসের নির্দেশ জারি করে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ সালে মংলা বন্দরে আমদানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে পাঁচ লাখ ও নয় লাখ মেট্রিক টন। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে তা ২৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে।
জানতে চাইলে বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মাহবুবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মংলা বন্দর ব্যবহারে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ কম। তাই এ বন্দরে কার্যক্রম বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেয়। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত যেন এই বন্দর ব্যবহারে এগিয়ে আসে, সেই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ’
এদিকে বেসরকারি আমদানিকারকেরা বলছেন, সমুদ্রপথে বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বন্দরে আধুনিক যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার তা মংলা বন্দরে নেই। অবকাঠামোর পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
বন্দর সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যশস্য ও সার ছাড়া এই বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া অন্যান্য পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিমেন্ট তৈরির বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল।
মংলা বন্দরসংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত কিছু সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করে থাকে। এছাড়া রিকন্ডিশন্ড গাড়িও আসছে।
রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে মংলা বন্দর পাট, পাটজাত পণ্য ও চিংড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে পাট ও চিংড়ির প্রায় পুরোটাই বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরা করে থাকে। দেশের রপ্তানি পণ্যের অন্যতম চিংড়ির উৎপাদন দক্ষিণাঞ্চলকেন্দ্রিক। তাই ওই অঞ্চলের পণ্য রপ্তানিতে মংলা বন্দরকে ব্যবহার করেন রপ্তানিকারকেরা।
খুলনার শিল্পোদ্যোক্তা ও হ্যামকো গ্রুপের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘মংলা বন্দরকে একটি পূর্ণ বন্দরে রূপ দিতে হলে এ অঞ্চলে শিল্পোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।’
http://www.prothom-alo.com/economy/article/83557