শেষ হলো সাত দিনের আয়কর মেলা

Picture

শাহিদা আক্তার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। থাকেন পূর্ব রাজাবাজার এলাকায়। গত রোববার বেলা তিনটার দিকে বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে এসেছিলেন। কিন্তু ব্যাংক বুথ, রিটার্ন জমার দীর্ঘ লাইন দেখে রিটার্ন না দিয়েই ফিরে গেছেন। ভিড়ের কথা মাথায় রেখে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে মেলায় এসেছেন। মেলায় বসেই ফরম পূরণ করেছেন। পরে দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে ব্যাংকে করের অর্থ জমা দিয়েছেন শাহিদা আক্তার। এরপর রিটার্ন জমা দিয়ে বের হতে বেলা প্রায় দুইটা।

 

 

মেলা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শাহিদা আক্তারের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। শাহিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু হয়রানির ভয়ে এত ভিড় ঠেলে মেলায় রিটার্ন জমা দিয়েছি। সার্কেল কার্যালয়ে গেলে কর্মচারীরা এই কাগজ নেই, ওই কাগজ নেই—এসব বলে। সব কাজ শেষ করতে দু-তিন দিন ঘুরতে হয়। রিটার্ন জমার পর আবার বিবরণীর জমার রসিদের জন্য আরেক দিন যেতে হয়। মেলায় এক দিনেই সব পাওয়া যায়।’ রিটার্ন জমার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পেরে তিনি বেশ খুশি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে অনুষ্ঠিত কর মেলায় ভিড় ঠেলে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়ার পর সব করদাতার মধ্যেই একধরনের স্বস্তি ছিল। কর কার্যালয়ের রিটার্ন জমার হয়রানি থেকে তো পার পাওয়া গেল! গতকাল রাজধানীসহ দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত কর মেলা শেষ হয়েছে।
তবে যাঁরা বাড়ি থেকে রিটার্ন ফরম এবং ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করে রসিদ নিয়ে এসেছেন; তাঁরা অনেকটা ঝামেলামুক্তভাবে রিটার্ন দিয়েছেন। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পেরেছেন তাঁরা। এমনই একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী মহিউদ্দিন আহমেদ। খিলগাঁওয়ে তাঁর বাড়িভাড়া আয়ের প্রধান উৎস। অবসর গ্রহণের পর কয়েক বছর ধরেই তিনি মেলায় রিটার্ন জমা দেন। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও রিটার্ন ফরম পূরণ এবং করের অর্থ পরিশোধ করেই মেলায় এসেছেন। তিনি জানান, বেলা দুইটা রিটার্ন জমার পর আধঘণ্টার মধ্যেই তিনি কর দেওয়ার প্রাপ্তি রসিদ পেয়ে গেছেন। এতে তিনি বেশ খুশি।
এবারের কর মেলায় তরুণদের মধ্যে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নেওয়ায় বেশ আগ্রহ ছিল। কারণ হলো, এবারের বাজেটে সব চাকরিজীবীর ই-টিআইএন থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই চাকরিজীবী তরুণ-তরুণীরা নতুন ই-টিআইএন নিতে ভিড় করেছেন কর মেলায়। গত সাত দিনজুড়েই রাজধানীর কর মেলায় ই-টিআইএন নেওয়ার বুথগুলোতে বেশ ভিড় ছিল। গতকাল তা আরও বেড়েছে।
কর অফিসে গেলে নানা ধরনের হয়রানি হতে হয়; ঘুষ ছাড়া ফাইল চলে না—বছরের পর বছর এই অভিযোগ করে আসছেন করদাতারা। ২০১০ সাল থেকে কর মেলা চালু হওয়ার পর প্রতিবছরই মেলায় রিটার্ন জমার আগ্রহ করদাতাদের মধ্যে দিন দিন বেড়ে চলেছে। এবার তো অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এবার রাজধানীসহ সাতটি বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলাসহ দেড় শ স্থানে আয়কর মেলা হয়েছে। যাঁরা মেলায় রিটার্ন জমা দিতে পারেননি, তাঁরা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর কার্যালয়ে রিটার্ন দিতে পারবেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এবারের দেশজুড়ে মেলায় মোট ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩ জন করদাতা-দর্শনার্থী এসেছেন। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের সেবা নিয়েছেন। এ ছাড়া ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জন করদাতা রিটার্ন জমা দিয়ে ২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা দিয়েছেন। গতবারের মেলায় ১ লাখ ৬১ হাজার রিটার্ন জমা পড়েছিল। এতে রাজস্ব প্রাপ্তি হয়েছিল ২০৩ কোটি টাকা।
মেলায় ৩৬ হাজার ৮৫৩ জন নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন, যা গতবারের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। মেলায় প্রথমবার রাজধানীর কর মেলায় কর শিক্ষণ ফোরাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মেলা পরিদর্শনের পাশাপাশি কর বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করেছেন। মেলা সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

তথ্যসূত্র : প্রথমআলো

About Author

Profile Picture

Md. Jahangir Alam

Leave a Comment