মুনাফা করা কঠিন, তবে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় বাংলাদেশ

Picture

জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য চীন, ফিলিপাইন ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে মুনাফা করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। তা সত্ত্বেও জাপানি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বেশ আকর্ষণীয় দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বড় কারণ হলো এখানে শ্রম সস্তা। আর পণ্যের উৎপাদন খরচ তো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যেকোনো দেশের চেয়ে কম।
এমন তথ্য উঠে এসেছে জাপানের এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে। জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ব্যবসায়িক পরিবেশ যাচাইয়ে জরিপটি করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এ জরিপে বলা হয়েছে, জাপানি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ খুবই আকর্ষণীয় দেশ। তবে এ দেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার কথাও উঠে আসে জরিপটিতে।
জেট্রো জানিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ২৩০টি জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে। এর মধ্যে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ জরিপে তাঁদের মতামত দেন। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২০টি দেশে ব্যবসারত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার জাপানি কোম্পানির প্রধান নির্বাহীর মত নেওয়া হয় জরিপে। ২০১৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে জরিপটি করা হয়।
চীন, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের চেয়ে বাংলাদেশে মুনাফা করাটা কেন কষ্টকর? এ প্রশ্ন করা হলে জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেট্রোর কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, জরিপের জন্য যেসব সিইও মতামত দিয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই এ জন্য কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতাকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ, এখানে বেশির ভাগ কাঁচামালই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে খরচ বেশি পড়ে। পাশাপাশি কর্মীদের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতার ঘাটতিও মুনাফা অর্জনকে কষ্টসাধ্য করে তোলে। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অবকাঠামো সমস্যা ও প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রতার বিষয়গুলো তো রয়েছেই।
জরিপ প্রতিবেদনমতে, বাংলাদেশে ব্যবসা করা জাপানি কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ৭০ শতাংশের বেশি বিদেশ থেকে আনতে হয়। তা সত্ত্বেও জাপানি কোম্পানিগুলোর নির্বাহীদের আত্মবিশ্বাসের শীর্ষে বাংলাদেশ। তাঁদের মতে, চলতি ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত হবে। যেখানে চীন ও থাইল্যান্ডে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত হওয়ার বিষয়ে তাঁদের আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ভবিষ্যতে জাপানের ব্যবসা সম্প্রসারণের সম্ভাবনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। চারটি কারণে এ সম্ভাবনা দেখছেন জাপানিরা। কারণগুলো হচ্ছে—উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, ব্যবসার খরচ কমার সম্ভাবনা, উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি এবং শ্রমশক্তির সহজ প্রাপ্যতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়। যেমন, চীনে শ্রমিকের মাসিক গড় মজুরি উৎপাদনশীল খাতে ৪২৪ মার্কিন ডলার ও অনুৎপাদনশীল খাতে ৮৪৫ ডলার। অথচ বাংলাদেশে উৎপাদনশীল খাতে শ্রমিকের মাসিক গড় মজুরি ১০০ ডলার আর অনুৎপাদনশীল খাতে ২১৫ ডলার। প্রতিবেশী ভারতে উৎপাদনশীল ও অনুৎপাদনশীল খাতে এ হার যথাক্রমে ২৩০ ও ৫৪৬ ডলার। আর পাকিস্তানে তা যথাক্রমে ১৮৫ ও ২৭৫ ডলার।
জাপান, পাকিস্তান, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশসহ নয়টি দেশে পণ্যের উৎপাদন খরচের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে জরিপে। তাতে বলা হয়েছে, জাপানে যেখানে পণ্য উৎপাদনে ১০০ ডলার খরচ হয় সেখানে বাংলাদেশে তা সাড়ে ৪৯ ডলার। পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত ও ফিলিপাইনে এ খরচ যথাক্রমে সাড়ে ৮৭, ৮২, সাড়ে ৮১, ৮১ ও ৭৬ ডলার।
বাংলাদেশের বাইরে অন্য দেশগুলোতে ব্যবসা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান শ্রম মজুরি চিন্তার বড় কারণ হয়ে উঠছে বলে জানান জরিপে অংশ নেওয়া নির্বাহীরা।

তথ্যসূত্র : প্রথমআলো

About Author

Profile Picture

Golden Bangladesh

Golden Bangladesh is a point of access to information.We present information from diverse sources in a unified way. It is the leading web portal, e-Directory and business guide in Bangladesh.

Leave a Comment