মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ কমেছে

Picture

দেশে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণপ্রবাহ কিছুটা কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিতরণকৃত মোট মেয়াদি শিল্পঋণ তার আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছে। এর ফলে পাঁচ বছর পর আবার শিল্পঋণপ্রবাহ কমে গেল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৩১১ কোটি ৩২ লাখ টাকার শিল্পঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিতরণকৃত মেয়াদি শিল্পঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
মূলত গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০১৩) দেশের অভ্যন্তরে যে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা বিরাজ করেছিল, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সার্বিকভাবে শিল্প ও ব্যবসার ওপর। অবশ্য অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি-জুন, ২০১৪) রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে।
শিল্প খাতের কর্মকাণ্ড ও ঋণের চাহিদা সামগ্রিকভাবে এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্বারা অনেকটাই প্রভাবিত হয়েছে। মেট্রো চেম্বারের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই শিল্পঋণের নিম্ন প্রবৃদ্ধির জন্য দায়ী।’
যদিও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণের পরিসংখ্যান বিষয়টি পুরোপুরি সমর্থন করে না। কেননা, আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আট হাজার ৮৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শিল্পঋণ বিতরণের পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা ব্যাপকভাবে বেড়ে হয় ১২ হাজার ৬৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
অবশ্য তৃতীয় প্রান্তিকে মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ আবার কমে হয় নয় হাজার ২৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর শেষ প্রান্তিকে ১১ হাজার ৪৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ করা হয়।
মেট্রো চেম্বারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধ শিল্প খাতের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে ছিল অব্যাহত জ্বালানিসংকট। এর ফলে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিও শ্লথ হয়ে পড়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিল্পঋণ বিতরণ যেটুকু কমেছে, তা খুবই নগণ্য। যেহেতু অর্থবছরের অর্ধেকটা সময়ই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, সেহেতু শিল্পোৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। ফলে নতুন বিনিয়োগের তুলনায় বরং চলতি বিনিয়োগ ও উৎপাদন ধরে রাখার দিকেই মনোযোগ বেশি ছিল।’
বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এখন পর্যন্ত গত অর্থবছরের শিল্পোৎপাদন পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ উপাত্ত প্রকাশ করতে পারেনি। বিবিএসের ওয়েবসাইটে গত অর্থবছরের মে পর্যন্ত সময়কালের বড় ও মাঝারি শিল্পোৎপাদনের পরিমাণ সূচক (কোয়ান্টাম ইনডেক্স) রয়েছে। তাতে দেখা যায়, মে মাস শেষে দেশের বড় ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদন তার আগের অর্থবছর শেষের (জুন, ২০১৩) তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) যে বিশ্লেষণ করেছে, তাতে দেখা যায় যে গড়ে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
তবে সার্বিকভাবে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির যে প্রাথমিক প্রাক্কলন করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় যে গত অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, যেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা হয়েছিল ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ। তার মানে শিল্প খাতে শ্লথগতির বিষয়টি স্পষ্ট।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় নতুন বিনিয়োগের জন্য ঋণের চাহিদা ছিল কম। বিতরণকৃত শিল্পঋণের বেশির ভাগই মূলত উৎপাদন ধরে রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে জমে যাওয়া বাড়তি নগদ অর্থও শিল্পঋণের সীমিত চাহিদার বিষয়টি সমর্থন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছর শেষে বাড়তি তারল্যের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, যেখানে ২০১৩ সালের জুন শেষে তা ছিল ৭৯ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জায়েদ বখত বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ জমে যাওয়ায় এখন সুদের হার কমতে শুরু করেছে। আমানতের সুদের হার অনেক কমে গেছে। সে তুলনায় ঋণের সুদের হার অতটা এখনো কমেনি। তবে এটিও কমছে। আর তাই আগামী দিনে ঋণপ্রবাহ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
বিআইডিএসের এই অর্থনীতিবিদ অবশ্য এও বলেন যে পদ্মা সেতুসহ সরকারি বড় বড় নির্মাণ প্রকল্পের ওপরই ব্যাংকের ঋণপ্রবাহের বৃদ্ধি নির্ভর করছে। এসব নির্মাণকাজ শুরু হলে আনুষঙ্গিক পণ্য ও সেবা সরবরাহে যে কাজ শুরু হবে, তা ঋণের চাহিদা তৈরি করবে।

তথ্যসূত্র: প্রথমআলো

About Author

Profile Picture

Mijan Niloy

Leave a Comment