১৮ মাসের মধ্যে জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম গতকাল সোমবার এক দিনেই সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। ফলে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল বা তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৫৭ দশমিক ৮৯ মার্কিন ডলারে উঠেছে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ের পরে, অর্থাৎ গত ১৮ মাসের মধ্যে এটিই জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দাম।
তবে গতকাল দিন শেষে ব্যারেলপ্রতি দাম কিছুটা কমে ৫৬ দশমিক ৭৯ ডলারে নেমে এসেছে। তারপরও তা আগের দিনের চেয়ে সাড়ে ৪ শতাংশ বেশি। অবশ্য গত বছরের একই সময় বিবেচনায় নিলে তেলের সর্বশেষ এই দাম ৫০ শতাংশ বেশি। আর বার্ষিক হিসাবে এটি ২০১১ সালের পরে তেলের দামে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইউএস ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৪৬ ডলার বেড়ে ৫৩ দশমিক ৯৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজের (ওপেক) পথ ধরে ও এর বাইরে থাকা ১১টি দেশও গত শনিবার এক বৈঠকে উত্তোলনের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াতেই মূলত বিশ্ববাজারে পণ্যটির দামে উল্লম্ফন ঘটে। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ওপেকের প্রধান কার্যালয়েই গত শনিবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাশিয়া, আজারবাইজান, ওমান, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, সুদান, সাউথ সুদান, বাহরাইন প্রভৃতি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ওপেক-বহির্ভূত ১১টি দেশ তাদের দৈনিক উত্তোলনের পরিমাণ ৫ লাখ ৫৮ হাজার ব্যারেল কমানোর চুক্তি করেছে। অতিরিক্ত সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।
এর আগে একই লক্ষ্যে তেল উত্তোলন কমানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক। যেসব দেশ ওপেকের সদস্য নয়, তারাও উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিক, এমনটা চাইছিলেন সংস্থাটির নেতারা।
২০০১ সালের পরে গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম তেল উত্তোলন কমানোর বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি বৈশ্বিক মতৈক্য হলো।
ওপেকের সদস্যরা আগামী মাস (জানুয়ারি) থেকে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল তেল কম উত্তোলন করবে। গত আট বছরের মধ্যে এটা হচ্ছে ওপেকের উত্তোলন কমানোর প্রথম সিদ্ধান্ত। ওপেকের সদস্যরা হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ভেনেজুয়েলা, ইরান, ইরাক, কুয়েত, নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, কাতার, অ্যাঙ্গোলা, ইকুয়েডর, গ্যাবন ও লিবিয়া।
এদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘২০১৭ সালের গোড়ার দিকে উত্তোলনের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত সরবরাহের পরিবর্তে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করবে।’ তবে কেউ কেউ অবশ্য দীর্ঘ মেয়াদে রপ্তানিকারকদের উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে ২০১৪ সালের জুন থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করে। এতে রপ্তানিকারক দেশগুলোর আয় কমতে থাকে। সে জন্য তারা অধিক পরিমাণে তেল উত্তোলন করে। এভাবে বিশ্ববাজারে জোগান বেড়ে যাওয়ায় তেলের দাম আরও কমে যায়। এমন এক অবস্থায় ওপেক সদস্য ও এর বাইরের দেশগুলো উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্বে মোট তেল উৎপাদনের ৪০ শতাংশ হয়ে থাকে ওপেকের সদস্যদেশগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রচুর পরিমাণে তেল উত্তোলন করে। তারা ওপেকের সদস্য নয়।

তথ্যসূত্র : প্রথমআলো

About Author

Profile Picture

Md. Jahangir Alam

Leave a Comment